সংগঠনের নাম : বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন)।
প্রতিষ্ঠাকাল : ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৭
রেজি নং : ঢ-০৬১৫২
মূলমন্ত্র : একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন।
বৈশিষ্ট্য : ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা পরিচালিত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : স্বেচ্ছায় রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করা।
ক্ষেত্র : বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সমূহ
আর্থিক যোগান : বাঁধন কর্মীদের চাঁদা ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা।বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন) আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে সেই ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মোট ৭৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২টি জোন, ১৪১টি ইউনিট ও ৪টি পরিবারের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। মুমূর্ষের জন্য সরবরাহ করছে বছরের প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদার সিংহভাগ, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে সকল ধরণের মানুষকে তার নিজ রক্তের গ্রুপ। দীর্ঘ ২৫ বছরের এই স্বপ্নযাত্রায় বাঁধন ২০,৭৯,৪৮৪ জন মানুষকে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে দিয়েছে ও রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং ৯,৭৮,৮৩১ ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে ১৯৯৭-২০২২ পর্যন্ত।কেন স্বেচ্ছায় রক্তদান করবেন?
আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৮-১০ লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। আর এই প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ হয় খুবই সামান্য। আর যতটুকু সরবরাহের ব্যবস্থা হয় তার ৬০ ভাগই পুরণ হয় পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে। পেশাদার রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে একইসাথে অস্বাস্থ্যকর। কারণ পেশাদার রক্তদাতারা গ্রহণ করে বিভিন্ন ড্রাগস এবং শরীরে বহন করে হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডস, সিফিলিস এর মত জীবন ধ্বংসকারী বিভিন্ন রোগের জীবাণু। যে কারণে আমাদের দেশে রক্তের অভাবে প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগী মৃত্যুবরণ করে। একবার ভেবে দেখুন আজ যে রোগীটা মারা যাচ্ছে সে যদি আমার মা হত বা বাবা হত তাহলে!
রক্তদানের যোগ্যতা:
১. বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে (নারী ও পুরুষ)।
২. ওজন ৪৮ কেজি (পুরুষ) ৪৫ কেজি (নারী)।
৩. সময় ১২০ দিন পর পর অর্থাৎ ৪ মাস পর পর।
৪. শারিরীকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।
রক্তদান সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা-
রক্তদান করলে শারিরীকভাবে অসুস্থ হওয়া, শরীর মুটিয়ে যাওয়া, শরীর শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ভুল ধারণা মানুষের মধ্যে কাজ করে, যার পুরোটাই আমাদের রক্তদান সম্পর্কে অসচেতনতা ও ভয় থেকে সৃষ্টি। রক্তদান করলে শারিরীকভাবে কোন সমস্যার সৃষ্টি বা অসুস্থ্য হওয়া এর কোনটাই হয় না। বরং রক্তদান করলে শারিরীকভাবে বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়, মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায় যা অন্য কোনভাবে মানুষের উপকারের মাধ্যমে অর্জন সম্ভব নয়।রক্তদানের উপকারিতা:
রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। কেননা একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। রক্তের মূল উপাদান পানি, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়।
১। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ‘বোনম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়, ঘাটতি পূরণ হয়।২। বছরে তিনবার রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়ায়।
৩। নিয়মিত রক্তদানকারীর হার্ট ও লিভার ভালো থাকে।
৪। স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় শরীরে অন্য বড় কোনো রোগ আছে কি না। যেমন—হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।
৫। রক্তদান অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
৬। রক্তে কোলস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে।
৭। শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে বলে Hemochromatosis। নিয়মিত রক্তদান এই রোগ প্রতিরোধ করে।
৮। স্থূলদেহী মানুষের ওজন কমাতে রক্তদান সহায়ক।
৯। মুমূর্ষুকে রক্ত দিলে মানসিক তৃপ্তি মেলে।
যারা রক্ত দিতে পারবেন না-
১। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম (পুরুষদের ন্যূনতম ১২ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীদের ন্যূনতম ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার হতে হবে) থাকলে।
২। রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক না থাকলে রক্ত দেওয়া ওই মুহূর্তে উচিত নয়।
৩। শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত রোগ, যেমন হাঁপানি বা অ্যাজমা।
৪। রক্তবাহিত রোগ যেমন, হেপাটাইটিস বি বা সি, জন্ডিস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি থাকলে রক্ত দেওয়া যাবে না। তা ছাড়া টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ, বাতজ্বর, হৃদ্রোগ থাকলেও রক্ত দেওয়া উচিত নয়।
৫। নারীদের মধ্যে যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা ও যাঁদের ঋতুস্রাব চলছে তাঁরা রক্ত দেবেন না, সন্তান জন্মদানের এক বছরের মধ্যেও না।
৬। যাঁরা কিছু ওষুধ সেবন করছেন, যেমন, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি তাঁরা সে সময় রক্ত দেবেন না।
৭। যাঁদের বিগত ৬ মাসের মধ্যে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁরা রক্ত দেবেন না।
রক্তদানের পাশাপাশি কার্যক্রম-
দেশের যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। বন্যা, শীতার্তদের সহায়তা, অতিমারী, মহামারী মোকাবেলা এবং মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা।
“আমাদের অনুভূতিতে মানুষের ভালোবাসা
আমরা অনুভব করি এদেশের মাটির ঋণ
আমরা কাজ করি আমাদের দায়বদ্ধতায়”
“রক্তস্নাত এই বাংলায় রক্তের অভাবে মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে, দায়বদ্ধ করে জীবনের কাছে, মানবতার কাছে”